Wednesday, 29 November 2017

PADMAVATI - an imaginary charater. (29.11.2017)

Post Under : Kolkata Bulletin | Date : November 29, 2017 | Topics Covered :
My article has published in Anandabazar Patrika(29.11.2017). To Read the article click the provided link: http://www.anandabazar.com/editorial/letters-to-the-editor-1.715020


গোটা ব্যাপারটাইতো কল্পনার ভুবনে
‘পদ্মাবতী’ ছবিটি নিয়ে যে প্রতিবাদ ও পালটা প্রতিবাদ চলছে, সে সব দেখে যে প্রশ্নটি প্রথম মাথায় আসে তা হল, সত্যিই কি আসলে পদ্মাবতী রয়েছে? পদ্মাবতীর প্রথম উল্লেখ মেলে মধ্যযুগীয় কবি মালিক মুহম্মদ জায়সীর ‘পদ্মাবৎ’ কাব্যে, প্রকাশকাল ১৫৪০। জায়সীর বর্ণনা অনুসারে, সিংহল দ্বীপের রাজা গন্ধর্বসেনের কন্যার একটি কথা-বলা পাখি ছিল, যার নাম হিরামন। চিতোররাজ রতন সেন হিরামনের মুখে পদ্মিনীর রূপের প্রশংসা শুনে স্বয়ংবর সভায় পদ্মিনীর মন জয় করতে সিংহল দ্বীপে পাড়ি দেন। নানা বাধাবিপত্তির শেষে রতন সেন ও পদ্মাবতীর বিবাহ সম্পন্ন হয়।
কাব্যের দ্বিতীয় ভাগে আবির্ভাব হয় সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির। রানি পদ্মাবতীর রূপে মোহিত হয়ে আলাউদ্দিন রতন সেনের কাছে পদ্মাবতীকে দাবি করেন। চিতোররাজ তা অস্বীকার করায় আলাউদ্দিন খিলজি চিতোর আক্রমণ করেন। যুদ্ধে জয়লাভ করতে না পেরে বহুকাল আলাউদ্দিন চিতোর অবরোধ করেন। পরে রতন সেনের সঙ্গে সন্ধি প্রস্তাব করেন এবং প্রাসাদে আমন্ত্রিত হয়ে ছলনার আশ্রয়ে রতন সেনকে বন্দি করেন। চিতোররাজকে মুক্তির শর্তস্বরূপ সুলতান পদ্মাবতীকে দাবি করেন। ইতিমধ্যে, চিতোরের দুই যোদ্ধা গোরা ও বাদল নারীর ছদ্মবেশে রতন সেনকে উদ্ধার করেন। এর পর আলাউদ্দিন খিলজি দ্বিতীয় বার চিতোর আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধে রতন সেন পরাজিত ও নিহত হন। সুলতান পদ্মাবতীকে পাওয়ার জন্য প্রাসাদের দিকে অগ্রসর হতেই, পদ্মাবতী অন্য সব রাজপুত রমণীদের সঙ্গে নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে ‘জহর ব্রত’ পালন করেন।
এই ঘটনার কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায় না। ঐতিহাসিক দলিল অনুসারে, আলাউদ্দিন খিলজি চিতোর আক্রমণ করেন ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি এবং ২৬ অগস্ট তিনি চিতোর অধিগ্রহণ সম্পূর্ণ করেন। অর্থাৎ তাঁকে দ্বিতীয় বার চিতোর আক্রমণ করে জয় পেতে হয়নি। তবে বাস্তবিকই সে সময়ে (১৩০২ খ্রিস্টাব্দ) রতন সেন চিতোরের রাণা ছিলেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায় ‘আইন-ই-আকবরী’তে এবং জেমস টডের ‘অ্যানালস অ্যান্ড অ্যান্টিক্যুইটিজ অব রাজস্থান’-এ। চিতোর আক্রমণের সময় সুলতানের সফরসঙ্গী আমির খসরুর বর্ণনাতে কিন্তু এর কোনও উল্লেখ নেই। আলাউদ্দিন ও পদ্মাবতীর উপাখ্যানটি সম্ভবত প্রথম বর্ণিত হয়েছে রাজপুত বীরত্বের গাথা ‘খুমান রাসো’য়। এই কিংবদন্তিই পরবর্তী কালে প্রবাহিত হয়েছে বিভিন্ন গ্রন্থে। তবে এ কথা সত্য যে আলাউদ্দিন খিলজি গুজরাত জয়ের পর রাজা কর্ণের স্ত্রী কমলাদেবীকে বিবাহ করে আনেন। আলাউদ্দিনের এই রমণীপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখেই আলাউদ্দিন-পদ্মাবতীর এই কিংবদন্তির সৃষ্টি হতে পারে।
উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যে আবার পদ্মাবতীকে এক জন বীর রাজপুত রমণী রূপেই বর্ণনা করে হয়েছে, যিনি এক শক্তিশালী মুসলিম শাসকের কাছ থেকে নিজের সম্মান বাঁচাতে জহর ব্রত পালন করেছিলেন। রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়ের ‘পদ্মিনী উপাখ্যান’ (১৮৫৮), জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সরোজিনী বা চিতোর আক্রমণ’(১৮৭৫), ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের ‘পদ্মিনী’(১৯০৬) এবং অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রাজকাহিনী’(১৯০৯) — সব কিছুতেই রাজপুত রমণীদের সাহসী, যোদ্ধা, অপরাজেয় হিসাবেই বর্ণনা করা হয়েছে।
ছবিটি মুক্তি না পাওয়া অবধি বোঝার উপায় নেই, ঠিক কোথায় ইতিহাস বিকৃতি ঘটেছে। দেখতে চেয়েছিলাম বহু শতক আগের কাহিনি কীভাবে জীবন্ত হয়ে ওঠে পরিচালকের হাত ধরে, যেখানে শেক্সপিয়র বা মার্লোর ট্র্যাজিক হিরোর মতন, ব্যর্থ আলাউদ্দিন খলজিকে চিতোরের রমণীদের চিতাভস্ম বাতাসে ওড়াতে দেখব!
ধীমান হালদার  নলগোড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

google+

linkedin